সামাজিক ব্যবসা ও অলিম্পিকে অন্য উচ্চতায় ড. ইউনূস
বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী হওয়ার যে পথ দেখানো শুরু করেছিলেন, সেই পথ এখন বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি, মেক্সিকো, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া হয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন পথের সঙ্গে মিশে গেছে। ড. ইউনূস তার সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে নিয়ে যাচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সবখানেই আছেন তিনি। এমনকি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক সেখানেও তার ডাক পড়েছে। ব্রাজিলের রিও-তে পৃথিবীর প্রাচীনতম এই ক্রীড়াযজ্ঞ শুরু হওয়ার আগের দিন অলিম্পিক মশাল বহন করে সামাজিক ব্যবসার এই প্রবক্তা নিজেকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। পুঁজিবাদের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলে এক নতুন পৃথিবী গড়ার জন্য এক নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন প্রফেসর ইউনূস। সামাজিক ব্যবসা নামে তার এই আন্দোলনের সারকথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে নতুন প্রজন্ম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রফেসর ইউনূস বলছেন, আমরা এমন একটা ব্যবসার কথা বলছি, যেটা দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হবে এবং বেকারত্ব ঘুচে যাবে। আবার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতও আসবে। আমরা মুনাফাবিহীন সামাজিক ব্যবসার কথা বলছি। যার মাধ্যমে তরুণরা এক একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। তরুণদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলছেন, তরুণদের টগবগে রক্তের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষমতা রয়েছে। তবে এই শক্তি কোথায় কাজে লাগাতে হবে আগে সেটা ঠিক করতে হবে। এ জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা নাহলে দারিদ্র্য আর বেকারত্ব আমাদের পিছু ছাড়বে না। তরুণ সমাজ জেগে থাকতে দারিদ্র্য আর বেকারত্ব থাকবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ঢাকার ইউনূস সেন্টার জানায়, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য মোকাবিলার সুযোগ সৃষ্টির জন্য মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। বর্তমানে এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ করার জন্য এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। দারিদ্র্য দূরীকরণে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য এবং সামাজিক ব্যবসার মানবিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব ইউনূসকে ভূষিত করেছে ১১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে। যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, আমেরিকার কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল, র?্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ, আগা খান অ্যাওয়ার্ড, সিডনি পিস প্রাইজ, সিউল পিস প্রাইজ প্রভৃতি। বাংলাদেশও তাকে ভূষিত করেছে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরস্কার ও স্বাধীনতা পুরস্কারে। পৃথিবীর ২০টি দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি লাভ করেছেন ৫৫টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। বিখ্যাত টাইমম্যাগাজিন ইউনূসকে একজন এশিয়ান হিরো এবং ২০০৮ সালে বিশ্বের ১০০ জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের মধ্যে অন্যতম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্বজুড়ে সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬-এ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ভারত, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, আজারবাইজানসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হয়েছে সমঝোতা স্মারক।
Source Link: https://goo.gl/pPmeJM
Source: Bangladesh Protidin
Updated Date: 9th March, 2017