চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের নার্সেস ইউনিভার্সিটি হবে

নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সুহৃদ আয়োজিত আলোচনা সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের ‘নার্সেস ইউনিভার্সিটি’ নির্মাণ করা হবে। একইসাথে হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে একটি ‘কনভেনশন সেন্টারও’ নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের মধ্যেই এসব নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে অনুষ্ঠিত সভায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে প্রদত্ত ড. ইউনূসের বক্তব্য প্রদর্শন ও আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অলিম্পিক কমিটিতে প্রদত্ত ড.ইউনূসের দীর্ঘ বক্তৃতা প্রদর্শিত করা হয়। সভায় ইউনূস সুহৃদের সাধারণ সম্পাদক ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক জানান, কেউ যদি সামাজিক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আসেন। তা গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তাকে কাউন্সিলিং এবং ফান্ড দেয়া হবে। সামাজিক উদ্যোক্তাদের ফান্ড দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার লিমিটেড (সিএসবি) গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের জন্য ড. ইউনূস কিছু করছেন না বিভিন্ন মহল থেকে এমন সমালোচনা রয়েছে। ড. ইউনূস সারা পৃথিবীর মানুষের ‘সোশ্যাল সিভিলাইজেশন’ চেঞ্জ করছেন। তাকে আমরা ক্ষুদ্র গ-ির মধ্যে নিয়ে আসব কেন ? আসলে ড. ইউনুস চট্টগ্রামে অনেক বড় কিছু নিয়ে আসতে চাচ্ছেন।

ড. ইউনূস আমাদের চট্টগ্রামেরই সন্তান উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে দিগনিদর্শন দিচ্ছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন। এটা কম গৌরবের কথা নয়। এমন আরেকজন সন্তানের জন্মগ্রহণ করার জন্য আমাদের আরো বহূবছর অপেক্ষা করতে হবে।
ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক আরো বলেন, ড. ইউনূস সামাজিক যে ব্যবসার কথা বলেছেন সেটার নিরিখে আমাদের চট্টগ্রামে কিছু কাজ হচ্ছে। কেউ যদি সামাজিক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আসেন তাকে ফাইন্যান্স করারও সুযোগ আছে আমাদের। এ সময় তিনি সামাজিক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সমাজের কল্যাণ করার আগ্রহ বা আইডিয়া থাকে তাহলে টাকার চিন্তা করতে হবে না।
ডা. এ এস. এম ফজলুল করিম বলেন, সবাইকে সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ নিয়ে ভাবতে হবে। একশ জন লোক যদি ভাবে তার মধ্যে ৫ টা বা ১০ টা আইডিয়া তো সফল হবে। চট্টগ্রামে ড. ইউনূস কর্তৃক একটি নার্স হসপিটাল করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নার্স যদি উন্নতমানের হয় চিকিৎসা সেবাও উন্নত মানের হবে।
ড. ইউনূস সুহৃদের সভাপতি প্রফেসর মু. সিকান্দর খান সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, আইডিয়াগুলো যে একদিনেই বুঝে যাব, একদিনেই যে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব সেটাও তো হবে না। আমাদের যার যার মাথায় যা আসে সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি কিংবা ইউনূস সেন্টারে যেতে পারি, সেখানে প্রচুর মানুষ আছেন যারা এই ব্যবসাগুলো বুঝেন। এই সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রত্যাশানুযায়ী আমরা প্রস্তাব পাচ্ছি না। প্রস্তাব পাওয়াটাও আমাদের স্বার্থকতা। প্রস্তাব পেলে তা যাচাই-বাছাই করে আমরা ফান্ড দিব। এই ক্ষেত্রে আমাদের চট্টগ্রাম সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার লিমিটেড থেকে ফান্ড দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ঘরের ছেলে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস আমাদের জন্য কি সম্মান বয়ে নিয়ে আসছেন সেটা আমাদের জানতে হবে। উনি কি করছেন সেটা মানুষকে জানানো আমাদের কর্তব্য।
সভায় ফারুক-ই-আজম সামাজিক ব্যবসার আইডিয়ার প্রেক্ষিতে সফল তিন তরুণকে উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে একজন ‘অন্নসেবা’ নামে একটি একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবিদা সুলতানা। এ প্রতিষ্ঠানটি কর্মজীবী মানুষের জন্য সাশ্রয়ীমূল্যে সুষম খাবার দিচ্ছে। বর্তমানে দৈনিক ৪শ থেতে ৪৫০ জন কর্মজীবীর মধ্যে এ সুষম খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দৈনিক এক লাখ মানুষের মাঝে এ খাবার বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতষ্ঠানটির। এ জন্য একটি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কিচেন করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায় পরিচয় করিয়ে দেয়া চট্টগ্রামের আরেকটি সামজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘আমিরুল ইসলামে’র ‘চিটাগাং সার্ভে লিমিটেড’। এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, আমাদের সবকিছুই হচ্ছে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে যে পরিসংখ্যানগতভাবে বিষয় আছে যেটা তাত্ত্বিকভাবে জানতে হয় সেটা সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমরা সঠিকভাবে জানি না আমাদের দেশে কতজন মানুষ আছেন। কেউ বলেন ১৮ কোটি আবার কেউ বলেন ২০ কোটি। এটার অথেনটিক কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। ঠিক একইভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এই ক্ষেত্রে শূন্যতা পূরণের জন্য গঠন করা হয়েছে ‘চিটাগাং সার্ভে লিমিটেড’। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, ইউনিভার্সিটি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠন যে ডাটা চাইবে তা অথেনটিকলি দিবে ‘চিটাগাং সার্ভে লিমিটেড’। সত্যিকার ডাটা দিবে তারা।
সভায় পরিচয় করিয়ে দেয়া তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘একোয়া লিমিটেড’। এ প্রতষ্ঠানটি পিউর পানযোগ্য পানির যোগান দিবে। আমরা এখন যে পানি খাচ্ছি সেটার কোন বেসিস নাই। কোথা থেকে আসছে এ পানি, কতটা পরিশুদ্ধ বা পানযোগ্য সেটা আমরা জানি না। পানযোগ্য পানির সংকট মেটাতে কাজ করবে ‘একোয়া লিমিটেড’।

 

Source Link: https://goo.gl/PO0ZP5

Source: Dainik Purbokone

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications

Yunus Social Business Week launched in China...

Published Date: 15th October, 2015

Grameen China to set up branch in Shenzhen ...

Published Date: 16th October, 2015