ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছিলেন ড. ইউনূস
হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর সঙ্গে যাঁরা ব্যক্তিগত কারণে দেখা করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হিলারির পারিবারিক দাতব্য সংস্থা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামও রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘটনাপঞ্জির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এ তথ্য জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার এপির ‘মেনি ডোনারস টু ক্লিনটন ফাউন্ডেশন মেট উইথ হার অ্যাট স্টেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিলারি ক্লিনটন যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে তিনবার দেখা করেছেন ২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস। এ ছাড়া কয়েকবার টেলিফোনেও কথা বলেছেন তিনি। ওই সময়টা ছিল যখন বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে মুহাম্মদ ইউনূসকে চাপ দিচ্ছিল। এ কারণে হিলারির সঙ্গে দেখা করে তিনি সাহায্য চেয়েছিলেন। হিলারি তাতে সাড়া দিয়ে ইউনূসকে সাহায্য করার পন্থা খুঁজে বের করতে সহকারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের আমেরিকান শাখা গ্রামীণ আমেরিকা ২০০৫ সালের শুরুর দিক থেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস’ (সিজিআই) কর্মসূচির সঙ্গে কাজ করে আসছে। এর লক্ষ্য ছিল কয়েক মিলিয়ন ক্ষুদ্র ঋণের তহবিল গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত অলাভজনক সংস্থা গ্রামীণ আমেরিকা, যার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ড. ইউনূস, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করার সময় ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার অনুদান দেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণের আরেকটি উদ্যোগ ‘গ্রামীণ রিসার্চ’ও (যার চেয়ারম্যান ড. ইউনূস) ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দেয়। তবে গ্রামীণ আমেরিকার মুখপাত্র বেকি অ্যাশ বলছেন, ফাউন্ডেশনের সিজিআই সম্মেলনে অংশগ্রহণের ফি হিসেবেই ওই অর্থ দেওয়া হয়েছে। এই হিসেবে ড. ইউনূস যদি ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে সর্বোচ্চ তিন লাখ ডলারও দিয়ে থাকেন, তাতে বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত কারণে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করা বা ফোনে আলাপ করা ১৫৪ জন ব্যক্তির মধ্যে ৮৫ জনই তাঁদের পারিবারিক ওই ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন। তাঁদের মোট অনুদানের পরিমাণ ১৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
এপি বলছে, হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে যাঁরা সরাসরি বা ফোনে ব্যক্তিগত কারণে আলাপ করেছেন আর যাঁরা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দৃশ্যত একটি যোগসূত্র রয়েছে। এর ফলে মার্কিন কোনো আইন ভঙ্গ হয়নি। কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে এমন একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাক্ষাতের বিনিময়েই যেন তাঁরা ওই অনুদান দিয়েছেন।
তবে হিলারি ক্লিনটনের মুখপাত্র ব্রায়ান ফ্যালোন এপির এ বিশ্লেষণকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলছেন, হিলারি ক্লিনটনের বৈঠকগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তাঁকে একপক্ষীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনের প্রথম অর্ধেকটা সময় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরো সময়টা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে অর্থ দিয়েছেন—এমন দাবি করে ট্রাম্প এ নিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, এর মাধ্যমে হিলারি তৃতীয় বিশ্বের মতো দুর্নীতি করেছেন।
Source Link: https://goo.gl/XHWZAh
Source: Kaler Kantha
Updated Date: 9th March, 2017