যে মশাল তরুণদের হাতে
‘ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড সামিট, ২০১৬’ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর কানাডার অটোয়ার পার্লামেন্ট হিলের সামনে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। আমরা বলতে আমি আর দুই বন্ধু সাজিদ আলম ও ইশমাম চৌধুরী। আমরা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ) পড়েছি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করার পর ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ডের উপদেষ্টা হিসেবে একে একে মঞ্চে উঠে আসেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসনসহ আরও অনেকে। আমরা খুবই অবাক ও গর্বিত হলাম যখন দেখলাম, তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে উঠে এলেন আমাদের নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। শুধু উঠলেনই না। কফি আনান, রবিনসনের মতো তিনিও একজন প্রধান বক্তা হিসেবে কথা বললেন তরুণদের উদ্দেশ্যে। নিঃসন্দেহে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ থেকে আগত ১ হাজার ৩০০ তরুণের সামনে দেওয়া তাঁর সেই বক্তব্য আমাদের মাথা আরও উঁচু করে দিয়েছে।
প্রথমেই ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড সামিটের পরিচয় দেওয়া যাক। এ সম্মেলনের আয়োজক ‘ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা। এ বছর সপ্তম আসর বসেছে কানাডার অটোয়াতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণদের এক জায়গায় নিয়ে এসে তাঁদের মধ্যে জানা ও বোঝার সুযোগ তৈরি করে দেয় এই আয়োজন। পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা তরুণদের সামনে বক্তব্য দেন, তাঁদের অনুপ্রাণিত করেন। ১৯৬টি দেশের তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল বলেই ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড সামিটকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘তরুণ সম্মেলন’। যে তরুণেরা এখানে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা সবাই কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়ে এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার টিকিট পেয়েছেন। আমরা তিনজন যেমন গত এপ্রিলে লন্ডনে অনুষ্ঠিত, ইউনিলিভার আয়োজিত ‘ফিউচার লিডারস লিগ’-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এ সুযোগ পেয়েছিলাম।
২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর, চার দিনের এ সম্মেলনের প্রথম দিন বিকেলে উদ্বোধনের শুরুতেই সব দেশের প্রতিনিধি নিজ নিজ দেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ছোট্ট একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় মূল পর্ব। সেখানেই জাস্টিন ট্রুডো, কফি আনান, ড. ইউনূস প্রমুখ ব্যক্তির কথা শোনার সুযোগ হলো। পরের দুদিন বিভিন্ন বক্তব্যের পাশাপাশি ছিল ‘এক্সটারনাল ব্রেকআউট সেশন’ ও ‘ইন্টারনাল ব্রেকআউট সেশন’। এক্সটারনাল ব্রেকআউট সেশনে আমাদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে কানাডার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি যেমন গিয়েছিলাম আইবিএম সেন্টারে। ওদিকে ইন্টারনাল ব্রেকআউট সেশনেও ভাগ ভাগ করে আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন হলিউড অভিনেত্রী এমা ওয়াটসনের কথা শোনার সৌভাগ্য হলো। নারী-পুরুষ সম-অধিকার বিষয়ে তাঁর বক্তব্যটা ভীষণ ভালো লেগেছে।
সত্যি বলতে কি, এই সম্মেলনে এসে বিভিন্ন মানুষ, তাদের দেশ, দেশের হাজারো সমস্যা সম্বন্ধে আমাদের চেনা-জানার পরিধি বেড়েছে। আমাদের ছোট্ট দেশটাতে বসে আমরা হয়তো পুরো পৃথিবীর সমস্যাগুলো ধরতে পারি না। এখানে এসে কিছুটা অন্তত জানা হলো। শুধু তা-ই নয়, সমস্যার সমাধান কীভাবে হতে পারে, সেটাও আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—পৃথিবীতে কোথাও যদি এ ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়, তার সমাধান যেন উঠে আসে এই তরুণদের হাত ধরেই।
Source Link: https://goo.gl/3e4I0Z
Source: The Daily Prothom Alo
Updated Date: 9th March, 2017