সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করবে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা

ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে ভারতের বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো একটি প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার কাজে হাত দিয়েছে। নোবেল জয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা তত্ত্ব বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করার কাজে নিয়োজিত বিশ্ব ইউনূস সামাজিক ব্যবসার ভারতীয় সংগঠন ‘ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ভারত’ ও ভারতের বিখ্যাত ‘টাটা ট্রাস্টস’ এর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘ভারতীয় কর্পোরেট এ্যাকশন ট্যাংক’ মুম্বাইয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে। পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা,স্যানিটেশন ও গৃহায়নের মতো মৌলিক সামাজিক চাহিদাগুলো পূরণ এবং দরিদ্রদের সেবায় সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে ভারতীয় কর্পোরেশনগুলো নিজেদের মতো করে এই উদ্যোগ নিলো। বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক তাদের মৌলিক ব্যবসায়িক দক্ষতা ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ কর্পোরেট সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিকভাবে টেকসই উপায়ে সমাজের বড় বড় সমস্যাগুলো মোকাবেলায় ভারতের প্রথম প্লাটফর্ম হিসেবে এই ভারতীয় কর্পোরেট এ্যাকশন ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলো।

নব প্রতিষ্ঠিত এই কর্পোরেট এ্যাকশন ট্যাংক বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও ভৌগোলিক উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাবে। যে সকল কোম্পানী ভারতীয় কর্পোরেট এ্যাকশন ট্যাংকে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছে, টাটা ট্রাস্ট, টাটা স্টীল, আরপিজি গ্রুপ, ড্যানোন ইন্ডিয়া এবং ভিওলিয়া ইন্ডিয়া। আরো দশটি কোম্পানী ইতোমধ্যে এতে যোগদান করার অপেক্ষায় রয়েছে। এই যৌথ উদ্যোগে যোগদানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবার প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।

এই পার্টনারশীপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভারতীয় কর্পোরেট এ্যাকশন ট্যাংক একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় আইডিয়া এবং এর ফলে ব্যবসা জগতে একটি সম্পূর্ণ নতুন ইকো-সিস্টেমের জন্ম হবে। ব্যক্তিগত মুনাফা-কেন্দ্রিক ব্যবসা মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সমান্তরালভাবে সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি করতে পারে- এই উদ্যোগ সেই বার্তাটিই দিচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কোম্পানিগুলো ব্যবসায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানের ব্যাপারে শুধুমাত্র আলোচনা করার উদ্দেশ্যেই একত্রিত হয়নি, বরং সামাজিক ব্যবসা পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার প্রকৃত সমাধানের জন্য সক্রিয় হতে যাচ্ছে এটাই নতুন সংবাদ। এটি শুধুমাত্র ভারতের জন্যই নয়, বরং গোটা পৃথিবীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত। আমি ভারতীয় এ্যাকশন ট্যাংকের সাফল্য কামনা করি। টাটা ট্রাস্ট্‌স এর হেড অব ইনোভেশন গনেশ নীলম বলেন, টাটা ট্রাস্ট্‌স-এ আমরা বিশ্বাস করি যে, কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্ট, উদ্ভাবনশীল ও প্রতিরূপ-নির্মাণযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যেই রয়েছে ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়ন। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কর্পোরেটগুলোর বর্ধিত মনোযোগের মধ্য দিয়ে ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটিগুলোর জীবনমান উন্নয়নে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা তৈরীর কাজ করে যাবে।”

টাটা ট্রাস্ট্‌স এর লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবেলার মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংকে অংশগ্রহণকারী কর্পোরেশনগুলোকে নেতৃত্ব দেয়া। টাটা ট্রাস্ট্‌স সমাজের প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো অনুধাবন করতে এই সামাজিক ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করবে এবং কমিউনিটির সাথে টাটার শক্তিশালী যোগাযোগকে কমিউনিটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে নবগঠিত সামাজিক ব্যবসাগুলোর পাইলটিং ও ক্রমপ্রসারের কাজে সহায়তা করবে।

মহারাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী সুধির মানগান্তিওয়ার, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী দীপক ভাসান্ত কেশরকার এবং ভারতের নেতৃস্থানীয় কর্পোরেশনগুলোর প্রধান নির্বাহী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভারতীয় সামাজিক ব্যবসা ফোরাম চলাকালে ভারতীয় কর্পোরেট এ্যাকশন ট্যাংকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। ফোরামের প্রধান অতিথি প্রফেসর ইউনূস অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য প্রদান করেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় ২০০ অংশগ্রহণকারী ফোরামে যোগ দেন। অন্যান্য যে সকল কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এতে যোগ দেয় তাদের মধ্যে ছিল সডেক্সো ইন্ডিয়া, মাহিন্দ্র, ইউটিভি গ্রুপ, আরপিজি এন্টারপ্রাইজেস, অ্যাপোলো,ওকহাড্রট এবং টাটার কয়েকটি কোম্পানীর প্রতিনিধিগণ। মন্ত্রীদ্বয় ও প্রফেসর ইউনূস বিনীতা রেড্ডির পারিবারিক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ব্যাঙ্গালুরুতে একটি ‘সামাজিক ব্যবসা ফান্ডের’ প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। মিস রেড্ডি ভারতের নেতৃস্থানীয় ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক ‘গ্রামীণ কোটা’রও প্রতিষ্ঠাতা। ‘ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ফান্ড ব্যাঙ্গালুরু’ নামে নবপ্রতিষ্ঠিত এই ফান্ডের প্রাথমিক মূলধন ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তহবিলটি কর্ণাটক ও আশেপাশের রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করবে।

উল্লেখ্য যে, প্রথম সামাজিক ব্যবসা তহবিলটি ২০০৯ সালে শেলগিকার কর্তৃক মুম্বাইয়ে তার ব্যক্তিগত তহবিলের এক লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তহবিলটি মুম্বাইয়ে অনেকগুলো সফল সামাজিক ব্যবসার জন্ম দিয়েছে। প্রফেসর ইউনূস বার্ষিক ফিলানথ্রপি ফোরামের প্রধান বক্তা হিসেবেও বক্তৃতা করেন। এই ফোরামের আয়োজক উইপ্রোর সভাপতি আজিম প্রেমজি, জামশেদ গোদরেজ ও বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব বিল গেট্‌স।

প্রফেসর ইউনূস মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারমরমিং আর্টসে অনুষ্ঠিত ভারতের নেতৃস্থানীয় সাহিত্য উৎসব ‘টাটা লিট লাইভ’-এ যোগদান করেন। ‘ব্যাংকিং ফর দি বটম বিলিয়ন’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্যানেলে ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের সাথে তিনি মুখোমুখি আলোচনায় অংশ নেন।

প্রফেসর ইউনূস ভারতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানীগেুলোর প্রধান নির্বাহীদের সাথে একটি একটি প্রাতঃরাশ সভায়ও যোগ দেন এবং সম্পদ কেন্দ্রীকরণের বিপদ ও তরুণদের ক্ষেত্রে চাকরি খোঁজার চেয়ে বরং উদ্যোক্তা হবার পথে তাদের পরিচালিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন।

দ্বিতীয় দিনে প্রফেসর ইউনূস টাটা গ্রুপের আয়োজনে টাটার ১০টি কোম্পানীর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। তিনি নিম্ন আয়, স্বাস্থ্যসেবার অভাব, বার্ধক্য, বেকারত্ব এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলো থেকে অর্থনীতি ও সমাজকে রক্ষা করতে প্রথাগত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার উপর বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যের পর অংশগ্রহণকারীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

 

 

Source Link: https://goo.gl/i3pQhb

Source: Dainik Azadi

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications

Yunus Social Business Week launched in China...

Published Date: 15th October, 2015

Grameen China to set up branch in Shenzhen ...

Published Date: 16th October, 2015