শুধু খাদ্য নয়, খাদ্যমানও গুরুত্বপূর্ণ'
স্টকহোমের সিটি কনফারেন্স সেন্টারে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সারা দিন ছিল খাদ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা। কখনো বক্তৃতা, কখনো প্যানেল আলোচনা, কখনো সাক্ষাৎকার। আলোচনার সকালের সেশনে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিল কথোপকথন।
খাদ্য বিষয়ে কথোপকথনের সময় মুহাম্মদ ইউনূস তুলে ধরেন গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে তোলার পটভূমি। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল দুর্ভিক্ষের সময়। মানুষ খেতে পেত না তখন। যখন দুর্ভিক্ষ হয়, তখন সবার আগে মনে হয় খাদ্যাভাবের কথা। এটা খাদ্যাভাব নয়। খাদ্য ছিল সেখানে, কিন্তু মানুষের হাতে টাকা ছিল না, তারা ধারে কিছু কিনতে পারেনি। এ জন্য আয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আমরা দেখলাম, শুধু খাদ্য নয়, খাদ্যের মানও গুরুত্বপূর্ণ। এটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর কাছ থেকে কী আশা করা যায়? এরই পথ ধরে আমরা সামাজিক ব্যবসা শুরু করলাম।’
নোবেল মিডিয়ার চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার অ্যাডাম স্মিথ প্রশ্ন করেন, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য কী করা যেতে পারে? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, যে ব্যবস্থাটা রয়েছে, সেটি পরিবর্তন করতে হবে।
পরে বিকেলের সেশনেও ‘টেকসই খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনায় ড. ইউনূস অংশ নেন।
খাদ্য বিষয়ে দিনব্যাপী আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। পরিবেশ, উদ্বাস্তু সমস্যা, সন্ত্রাসবাদ, ক্ষুধা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। ঝটিকা অধিবেশন। একটি আলোচনা শেষ হলেই সময় নষ্ট না করে ঢুকে যাওয়া হচ্ছে আরেকটি আলোচনায়।
সকালের সেশনে ড. ইউনূসের সঙ্গে কথোপকথন ছাড়াও ছিল খাদ্যসংক্রান্ত আরও পাঁচটি বিষয়। টেকসই ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যই যে আগামী দিনের পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে, তা নিয়ে কথা বললেন স্টকহোম
রেজিলিয়েন্স সেন্টারের জোহান রকস্ট্রোম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যবিষয়ক গবেষক টারা গারনেট এই পৃথিবী ও তার খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণী মতামত পেশ করেন। বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসে খাদ্য নির্বাচনে মানুষের অধিকার না থাকার বিষয়টি। ২০১৫ সালে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী আনগাস ডিটন যখন অপুষ্টি, দারিদ্র্য ও কম মজুরি নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন শ্রোতারা। অপুষ্টি থেকে মুক্তি পেলে তা যে মানুষের উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে, এ বক্তব্য তুলে ধরতে তিনি ভারত উপমহাদেশের মানুষের ওপর করা জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। লেখক ট্রিস্টাম স্টুয়ার্ট দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছিষ্ট খাদ্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য নষ্ট করার বিভিন্ন স্লাইড দেখিয়ে তা আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেন।
জিম্বাবুয়ের কৃষি বিশেষজ্ঞ লিন্ডি মাইয়েলে সিবান্ডা বলেন, তাঁদের দেশে এখন সকালের নাশতায় কোনো বৈচিত্র্য নেই। দুটি জিনিস করতেই হবে। এক. খাবারের টেবিলে বৈচিত্র্যময় খাদ্য রাখার অভ্যাস করতে হবে। দুই. ডাইনিং রুম ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার সঙ্গে এই পরিবারের সবার একসঙ্গে খাওয়ার সম্পর্ক আছে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে পরিবারে। এই যোগাযোগ গড়ে উঠবে খাদ্য উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী এবং ভোক্তার মধ্যেও।
নানা ধরনের আলোচনা চলাকালে একটি কথা আটকে গেল মনের মধ্যে। তার একটি হলো, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির জেসিকা ফাঞ্জোর বলা, ‘ডু উই হ্যাভ রাইট টু ইট রংলি?’ এ কথা বলার আগে তিনি বলছিলেন, খাদ্য উৎপাদকই স্থির করে দিচ্ছে ভোক্তা কী খাবে, কী না খাবে। প্রচারণা চালিয়ে ভোক্তার রুচি তৈরির দায়িত্বও সে নিয়ে নিচ্ছে। তিনি নেপালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। সেখানে সস্তা ইনস্ট্যান্ট নুডলস দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। এগুলো পুষ্টিকর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা বলছে, তাদের খাদ্য গ্রহণ করাটাই একমাত্র ঠিক পথ।
নোবেল সংলাপে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া আরও পাঁচজন নোবেল বিজয়ী অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা হলেন এলিজাবেথ ব্ল্যাকবাম, স্টিভেন চু, অ্যানগাস ডিটোন, ক্রিস্টিয়ান রুইলোইন ভোলার্ড ও রিচার্ড রবার্টস।
আজ শনিবার বিকেলে নোবেল পুরস্কার বিতরণী, তারপর ভোজসভা। এ দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নোবেল সপ্তাহের সমাপ্তি ঘটবে।
Source Link: https://goo.gl/CH6Qsy
Source: The Daily Prothom Alo
Updated Date: 8th March, 2017