জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে ইউনূসসহ ১৩ নোবেলজয়ীর চিঠি
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১৩ জন নোবেল বিজয়ী। এছাড়া ইতালির প্রধানমন্ত্রীসহ মোট ২২ জন ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ড. ইউনূস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি তার এক বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন ঢাকায়। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের বরাতে এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা জানায়, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা হাজার-হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি’র বিশেষ দূত শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।
১৩ নোবেলজয়ীর বিবৃতি সম্পর্কে ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতিগত নিধন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধতুল্য একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে মিয়ানমারে। গত দুই মাসে রাখাইন প্রদেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে, তাতে শত শত রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হচ্ছে। এতে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আরও ভয়ের ব্যাপার, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আগে থেকেই চরম দরিদ্র এই এলাকাটিতে মানবিক সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার মানুষ নিকটবর্তী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। কোনও কোনও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাটিকে গণহত্যাতুল্য বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিকট অতীতে রুয়ান্ডা, দারফুর, বসনিয়া ও কসোভোয় সংঘঠিত গণহত্যাগুলোর সব বৈশিষ্ট্য এখানে দৃশ্যমান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অং সান সু চির কাছে বারবার আবেদনের পরও তিনি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ ও সম-নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে কোনও উদ্যোগ নেননি। এতে আমরা হতাশ হয়েছি। সু চি মিয়ানমারের নেত্রী। সুতরাং দেশটিকে সাহস, মানবিকতা ও সমবেদনার সঙ্গে পরিচালনা করার দায়িত্ব তারই। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, হোসে রামোস-হরতা, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়াম্স, অসকার অ্যারিয়াস, জোডি উইলিয়াম্স, শিরিন এবাদী, তাওয়াক্কল কারমান, লেইমাহ বোয়ি, মালালা ইউসুফজাই; চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেলজয়ী স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, চলচ্চিত্র পরিচালক রিচার্ড কার্টিস, নারী অধিকার প্রবক্তা আলা মুরাবিত, দ্য হাফিংটন পোস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক অ্যারিয়ানা হাফিংটন, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, পল পোলম্যান, মো. ইব্রাহিম, জোকেন জাইট্জ ও মানবাধিকারকর্মী কেরি কেনেডি।
ঢাকায় আসছেন সু চি’র বিশেষ দূত : রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ার পর এবার রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি তার এক বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের বরাতে এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা জানায়, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা হাজার-হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি’র বিশেষ দূত শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সেসময় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত এই বিশেষ দূত পাঠানোর কথাটি বাংলাদেশকে জানান। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘উনি আমাদের বলেছেন ওনাদের একজন স্পেশাল এনভয় আসবেন। ওনারা শিগগিরই আমাদের জানাবেন কবে আসবেন।’ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন বন্ধে কোনো ভূমিকা না রাখায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অং সান সু চি’র কড়া সমালোচনা করছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে যে, রাখাইন রাজ্যে গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের উপর দমন-নিপীড়নের ঘটনায় প্রায় ৫০ হাজার মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছে, সেদেশ থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার বাংলাদেশি জেলেদের একটি নৌকায় মিয়ানমারের বাহিনীর গুলি করার ঘটনায় একটি প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি জানান, জেলেরা বাংলাদেশর জলসীমায় থাকার পরেও মিয়ানমারের বাহিনী তাদের উপর গুলি চালিয়েছে।
Source Link: https://goo.gl/wbC0Se
Source: Dainik Purbokone
Updated Date: 8th March, 2017