ক্ষুদ্র ঋণের জন্য সিআইবি হচ্ছে
ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের জন্য ব্যাংক খাতের মধ্যে ঋণ তথ্য ব্যুরো বা সিআইবি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। চলতি বছর পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিআইবি চালু হবে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি কর্মসম্পাদন চুক্তি করেছে এমআরএ। চুক্তিতে সংস্থাটি তাদের এ পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। সংস্থাটির পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন সমকালকে বলেন, এমআরএ একটি সিআইবি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছরই পাইলট হিসেবে চালু করা হবে। এতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সব ধরনের ঋণ তথ্য থাকবে। এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার গঠন। কারণ বর্তমানে যে তথ্য আছে তা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ করা তথ্য। তবে কত থেকে কত অঙ্কের ঋণ তথ্য এই সিআইবিতে থাকবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। -
এমআরএ লাইসেন্স নিয়ে বর্তমানে সারাদেশে ৬৮২টি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দেশব্যাপী ১৮ হাজার শাখা রয়েছে। জুন শেষে এ খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠানগুলো ৬৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ব্যাংকগুলো থেকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিল জোগান বৃদ্ধি করায় এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণ খাতের প্রায় ২১ শতাংশ তহবিলের জোগান দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
গ্রাহকদের ঋণ তথ্যভাণ্ডার না থাকায় একই গ্রাহক একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। কিন্তু ওই গ্রাহক সম্পর্কে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য থাকে না। তবে সিআইবি গঠনের পর কোনো গ্রাহক খেলাপি হলে তিনি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবেন না।
ক্ষুদ্র ঋণ এখন আর শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও বিস্তৃত হচ্ছে এই ঋণ। বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ যাচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোগে। আবার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্রমবিকাশ হচ্ছে। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এখন আর ক্ষুদ্র নেই। আবার ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ক্ষুদ্র ঋণ দিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি সিটিব্যাংক এনএ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের পরিধি বদলে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো এক সময় শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ দিত। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোগে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ গ্রহীতাদের জন্যও এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সিআইবি রয়েছে। এই ঋণ তথ্যভাণ্ডারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের ৫০ হাজার টাকার বেশি ঋণের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। কোন গ্রাহক ঋণের কতটি কিস্তি পরিশোধ করেছেন, কত বকেয়া রয়েছে তার বিস্তারিত থাকে সিআইবিতে।
সিআইবি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সংস্থাটি আগামীতে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট তৈরি, ক্ষুদ্র ঋণ খাতের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে অভিন্ন নীতিমালা, গবেষণা, আমানতের নিরাপত্তা তহবিল ও এ বিষয়ক জ্ঞান সম্পর্কিত কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বলে কর্মসম্পাদন চুক্তিতে উল্লেখ করেছে। তবে এসব কাজে সংস্থাটির জনবল সংকট প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই চুক্তিতে। এমআরএ মাত্র ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বিশাল এই খাতের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করছে। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের এমআরএর লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন রয়েছে তার ৯০ শতাংশের আবেদন নিষ্পত্তি করা, ৩৮০টি প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করা, সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮৫ শতাংশের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ, এ খাতের ৫০০ জনবলকে প্রশিক্ষণ, এমআরএর কার্যক্রম ও ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ৭১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ আদায়ের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে কর্মসম্পাদন চুক্তিতে।.
Source Link: http://bangla.samakal.net/2016/07/05/222716
Source: Daily Samakal
Updated Date: 9th March, 2017